আবার পাহাড় ধস, ১৭ জনের প্রাণহানি ।। টানা বর্ষণে বাটালি হিলে প্রতিরোধ দেয়াল ভেঙে পড়ল বস্তিতে
ইমন জামান02/07/20116440
রেটিং:
3
নিশ্চিত মৃত্যুকে বুকে টেনে নিয়ে ঝরে পড়লো পাঁচটি পরিবারের সতেরটি তাজা প্রাণ। দারিদ্রতার অভিশাপ আর অজ্ঞতার কারণে প্রশাসনিক নির্দেশ উপেক্ষা করেই তারা রয়ে গিয়েছিল নগরীর বাটালি হিলে। ভেবেছিল পাহাড় ধস রুখতে দেয়া প্রতিরোধ দেয়াল তাদের রক্ষা করবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গতকাল ভোরে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে সেই দেয়ালের একাংশ ধসে পড়ে তাদের জীর্ণ কুঠিরগুলোর উপরে। ঘুমন্ত অবস্থায় মাটির সাথে মিশে যায় তারা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে একে একে মাটি খুঁড়ে ১৫ জনের মৃত দেহ উদ্ধার করে।
মাটির নিচে আরো দুটি পরিবারের ২ সদস্যের লাশ রয়েছে বলে ধারণা করছেন উদ্ধার কর্মীরা। পাঁচটি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবারের লাশ এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছে বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রেহানা বেগম (৪০), মেয়ে শারমিন বেগম (২৫), ফাতেমা (১২), তানজিনা (৪) ও ছেলে আজাদ (৮)। আমজাদ (৪০), তার স্ত্রী রাজিয়া (৩২) ও মেয়ে শারমিন (১৪), সফিউল্লাহ (৪৫), তার স্ত্রী মিনু আক্তার (৩৫), মেয়ে সোনিয়া (১০) ও ছেলে মিনহাজ (৭), সাজ্জাদ (১২), সাহেদা (১০) ও শাহীনুর। এছাড়া স্থানীয়দের দাবি মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে হোসনে আরা (৩৫), রাজিয়া ও তার মেয়ে শাহনূর। আহত আনোয়ারকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের পর গতকাল ভোরে বাটালি হিল সংলগ্ন আনুমানিক বিশ ফুট উঁচু প্রতিরোধ দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল)-এর একাংশ ধসে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী কমিউনিটি সেন্টারের বয় জসীম জানান, প্রতিদিন ভোরে আমি ও সফি ক্লাবে যাই। গতকাল সকাল সাতটার দিকে সফিকে ডাকার জন্য আসি। হঠাৎ দেখি পাশের দেয়ালটি পড়ে যাচ্ছে। প্রাণ ভয়ে আমি লাফ দিয়ে দূরে সরে যাই। আমার চোখের সামনেই বিশাল দেয়াল ধসে পড়ে ঘরগুলোর উপর। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘটনা ঘটে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী আমির আলী বলেন, দেয়াল সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৩০/৩৫ টি কাঁচা ঘর আছে। এর মধ্যে পাঁচ-ছয় ঘরের মানুষ ছাড়া বাকিরা নিরাপদে সরে গিয়েছিল। তারা নিজেরাই নিজেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম মঞ্জুর আলম ও পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ উপস্থিত হয়ে পুরো বিষয়টি তদারকি করতে থাকেন। সিটি মেয়র এম মঞ্জুর আলম জানান তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। গতকাল আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের একপ্রকার বাধ্য হয়ে উচ্ছেদ করি। কিন্তু এ কয়টি পরিবার আমরা চলে যাওয়ার পর পুনরায় তাদের ঘরে চলে আসে। গতকাল এটা করা না হলে হতাহতের পরিমাণ কমপক্ষে পাঁচশ জন হতে পারতো। তাঁর সাথে একমত পোষণ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ বলেন, আমি সকাল থেকে আছি। সেনাবাহিনীকে সকাল দশটার দিকে খবর দিই। তিনি বলেন, গতকাল (পরশু) তাদের নানাভাবে বুঝিয়েও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন ডিসি নর্থ আমেনা বেগমের সাথে কথা বলে পুলিশ এনে উচ্ছেদও করা হয়। কিন্তু ঠিকই তারা রাতের আঁধারে আবার চলে আসে। তাদের জন্য স্কুল খুলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেখানে গিয়েও চলে আসে। আমি আজকে এক মহিলার সাথে কথা বলছিলাম। সে তার পরিবার নিয়ে নিরাপদে সরে গেছে। কিন্তু তার ভাই ভাবীকে কিছুতেই সরাতে পারে নি। তারা নাকি বলছিল হোঁচঠ খেলেও মানুষ মরে। (৯ম পৃঃ ১ম কঃ দ্রঃ)
ঘর ফেলে চলে গিয়ে লাভ কী?
তবে স্থানীয় বাসিন্দা আমির আলী স্পষ্ট বলেন, স্কুল খোলা ছিল না। স্কুল খোলা থাকলে আমরা সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতাম। স্কুল খোলা থাকলে এত মরতো না।
স্থানীয় বাসিন্দা মিনু আক্তার, খালেদা ও আরো কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, দেয়াল দিয়েই সিটি কর্পোরেশন সর্বনাশটা করলো। কই দেয়াল দেয়ার আগে তো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আর একটা দেয়াল দিতে তাদের দেড় বছর লেগেছে। কিছুদিন কাজ চলে, আবার বন্ধ হয়ে যায়। ধসে পড়া দেয়ালটি ছয় মাস আগে নির্মিত বলে তারা জানান। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন দেয়ালে ফাটল ধরেছে আরো আগে। তারা তখন কেউ ছিল না। কয়েকদিন পর পর এসে খালি বলে সরে যাও, সরে যাও। কোথায় যাবো, তা বলে না।
এদিকে বাটালী হিলে রিটেইনিং দেয়াল ধসে প্রাণহানির সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা: আফছারুল আমিন, সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি, সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা: শাহাদাত হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। স্থানীয়দের সাথে এসময় তারা আলাপ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
আপনার মতামত মতামত পাঠান